চালচিত্র এখন

ওহে রঞ্জন এই শহরের প্রতি এত্ত ঘৃণা! কী ক্ষতি করেছে হে কলকাতা তোমার! খোঁজও খোঁজও ভালোবাসা নিশ্চয়ই পাবে...। লম্বা সুঠাম চেহারা। অভিসন্ধিৎসু চোখ। প্রতি মুহূর্তে অনাবিল সৃষ্টির খিদে। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবির প্রতিটি ভাঁজে কত সহস্র চোখের যন্ত্রণা লুকিয়ে। প্রতিধ্বনি শব্দটা বারবার কানের পাশে যেন বাজছে। মনে হচ্ছে এই কথাগুলোই তো কুনাল বলছিল তার রঞ্জনকে।

কখনও দর্শন নিয়ে কাঁটাছেঁড়া। কখনও আবার তিনি বোহেমিয়ান। গদার-ত্রুফো-সত্যজিৎ-ঋত্বিকের একঝাঁক স্বপ্নের উড়ানের মাঝে এ শহরকে ভালোবেসে নকসী কাঁথার মতো প্রতিটি পরতে খুঁজে পেতে চেয়েছেন এক অন্য ভালোবাসা।নিজেকে নিজের চুল ধরে হেঁচড়ে টেনে দাঁড় করানো, নিজেকে নিজে ওলট-পালট করে ঝাঁকানো-তারপর গোটা পৃথিবীটাকে...। আল পাচিনো এমনটা ভাবতেন কিনা জানা নেই, তবে রঞ্জন খানিক এমনই। এভাবেই পৃথিবীকে দেখে সে। নতুন কিছু সৃষ্টির ঊর্ধে গিয়ে কর্মকাণ্ডে বিরাট নবজাগরণ আনার যে তাগিদ তা কুঁড়ে কুঁড়ে খায় তাকে প্রতিমুহূর্তে। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সকলের চেয়ে আলাদা। সমাজ ব্যবস্থাকে তোয়াক্কা না করেই নাটকের মঞ্চ তোলপাড়। তবে স্বপ্ন কিন্তু একটাই। জার্মানি যাবে সে।

রঞ্জনের এমন দু’চোখ ভরা স্বপ্নের মাঝে যিনি দু’হাত বাড়িয়ে আগলে নিলেন তিনি পরিচালক কুনাল সেন। যাঁর মগজাস্ত্রে অচেনা শহরের অলিগলির প্রতিটা মোড়ের গল্প পাক খায়। যে খুঁজে পেতে চায়, একঝাঁক অচেনা চোখ। পরিচালক নিজের খেয়ালে বাঁচেন। শুধু কি বাঁচেন? নাকি বাঁচানও! প্রোডাকশনের জন্য নিবেদিত প্রাণ মানুষগুলোর দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোটাতে তাঁর আজীবনের প্রচেষ্টা।

নায়ককে পরিচালকের পছন্দ হয়েছে। তা সে গড়ে-পিটে নিতে চায়, এ তো স্বাভাবিক! তা বলে এমন কাণ্ড! রঞ্জনের চরিত্রে শাওন চক্রবর্তীর চোখ থেকে ঠিকরে বেরচ্ছে রাগ-ঘৃণা। কিন্তু, উপায় কী। এমন মানুষের পাল্লায় পড়েছে যে কমিউনিস্ট না সিপিএম সব ঘেঁটে ঘ। বিয়ে করে মহা বিপাকে পড়েছে। স্টেস্টসম্যান-এর মতো সংবাদপত্রে বিশেষ সাক্ষাৎকার নেওয়ার চাকরিটাও ঘটনাক্রমে খুইয়েছে। এবার একদিকে বিদেশ পাড়ির স্বপ্ন, অন্যদিকে অদ্ভুত পিছুটান। শুধু কুনাল সেন বলে টিকে যাওয়া আর কী।

এ শহরে কিচ্ছু নেই। কোথায় প্রাণ আছে বলুন তো! এ প্রশ্নের উত্তর সপাটে দেওয়ার মানুষ ছিলেন মৃণাল সেন। মহানগরীর মরা পাথরেও প্রাণ খোঁজা এক পথিক তিনি। আর অঞ্জন দত্ত, সেই পথ ধরে চলা এমন এক সহযোদ্ধা, যাঁর কাছে আবেগ মৃণাল সেন। বহু মানুষের হৃদয়ে ঝড় তোলা নানা গল্পের কাহিনিকার।

চালচিত্র এখন কেমন হয়েছে তা কয়েকটি শব্দে ব্যক্ত করা কঠিন। একজন ছুঁতে না পাওয়া মানুষের জীবন, তাঁর যাপন, তাঁর অভ্যাস-অনভ্যাস, আদব-কায়দা, মাছ ভেঙে ভাত মেখে মুখে তোলা গ্রাস- বাঙালি বিশেষত এ প্রজন্ম তাঁকে কাছ থেকে না দেখতে পাওয়ার যন্ত্রণা চিরদিন থাকবে। তবে অঞ্জন দত্তের চেহারায় যে মৃণালকে দেখা গেল, সে রেশও বহুদিন থেকে যাবে দু’চোখে।

ক্যামেরার সুক্ষ্ম কাজ, সংগীতের যথাযথ ব্যবহার, আর প্রতিটা চরিত্রের পরিমিত ব্যবহার প্রশংসাযোগ্য। অভিনেতা শুভাশিষ মুখোপাধ্যায় বরাবরের মতো অল্পতেই ‘ফাটিয়ে’ দিয়েছেন। বিদীপ্তা স্ত্রী রূপে যোগ্য সঙ্গত। সঙ্গে কন্যা মেখলাও ওমন নানা ভাবনার স্বামীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঠান্ডা মাথায় সংসারের ব্যাটন ধরেছেন বটে। তাই স্বল্প সময়ের অঞ্জন দত্তের হৃদয়ের এমন অজানা কাহিনি একটিবার দেখতেই হবে।

এই ধরনের আরও খবর জানতে এই সময়ে আসুন। লেটেস্ট নিউজ, শহরের তাজা খবর, দেশের খবর, ব্যবসার খবর, খেলার আপডেট, দৈনিক রাশিফল এবং লাইফস্টাইলের টিপস জানুন। আর ভিডিয়োর জন্য রয়েছে TimesXP

2024-05-10T07:40:09Z dg43tfdfdgfd