ICSE COUNCIL : অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা, মেরিট লিস্ট তুলে দিল আইসিএসই কাউন্সিল

এই সময়: ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ‘অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা’ এড়াতে ফের মেধাতালিকা প্রকাশের পথ থেকে সরে দাঁড়াল সর্বভারতীয় সংস্থা আইসিএসই কাউন্সিল (পোশাকি নাম ‘সিআইএসসিই’)। সোমবার আইসিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে তারা। কিন্তু মেধাতালিকা বা মেরিট লিস্ট প্রকাশ করা হয়নি। কাউন্সিলের সচিব জোসেফ ইমানুয়েলের বক্তব্য, ‘অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা এড়াতেই আমরা আর কোনও মেধাতালিকা প্রকাশ করছি না।’

যদিও পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ মেধাতালিকা প্রকাশেরই পক্ষে। এতে যোগ্যদের স্বীকৃতি জানানো যায় বলে পর্ষদ ও সংসদ-কর্তাদের মত। আর এক দিল্লি বোর্ড সিবিএসই বহুদিনই মেরিট লিস্ট প্রকাশ করে না। আরও একবার সেই পথে সিআইএসসিই।

২০০৯ সালে দেশে শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর হওয়ার পরে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বোর্ডগুলি মেরিট লিস্ট প্রকাশ বন্ধ করেছিল। সিআইএসসিই, সিবিএসই-র সঙ্গেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ বেশ ক’বছর মেধাতালিকা প্রকাশ করেনি। কিন্তু ২০১১-র পর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে মেধাতালিকা ফেরে। সিআইএসসিই-ও আবার তা প্রকাশ করতে শুরু করে। মাঝে করোনার সময়ে পরীক্ষা না-হওয়ায় মেরিট লিস্ট বেরোয়নি। কিন্তু গত দু’বছর মেধাতালিকা প্রকাশ করেছে কাউন্সিল।

এমনিতে ফল প্রকাশের পরে কে ফার্স্ট, কে সেকেন্ড, তা জানতে উৎসুক হয়ে থাকেন বহু মানুষ। বিশেষত ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকরা। কিন্তু সামান্য দু’-এক নম্বরের হেরফেরে বহু ছাত্রছাত্রীই মেধাতালিকায় জায়গা পায় না। অথচ তাদের মেধা কোনও অংশে কম নয় বলে বিশেষজ্ঞদের মত। তাঁদের পর্যবেক্ষণ — লিস্টে থাকতে না পেরে এই ছেলেমেয়েদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ে। লিস্ট না বেরোলে এই প্রতিযোগিতারও প্রশ্ন ওঠে না।

সিআইএসসিই সূত্রে খবর, মেধাতালিকা প্রকাশ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলেছে মাস কয়েক ধরে। জাতীয় শিক্ষানীতির ডকুমেন্টেও অযথা পড়ুয়াদের উপর প্রত্যাশার চাপ তৈরি না করার বার্তা রয়েছে। এ বার দেশে আইসিএসই-তে পাশের হার গড়ে ৯৯ শতাংশের বেশি, আইএসসি-তে গড়ে ৯৮ শতাংশের বেশি। এবং ধারা বজায় রেখে এ বারও দেশ ও রাজ্যে মেয়েদের পাশের হার ছেলেদের তুলনায় বেশি।

গত সপ্তাহেই বেরিয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল। তাতে মেধাতালিকা ছিল। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় সোমবার বলেন, ‘আমরা মেধাতালিকার পক্ষে। এর মাধ্যমে বহু প্রান্তিক এলাকার স্কুল ও পড়ুয়া লাইমলাইটে আসে। নানা বাধার সঙ্গে লড়াই করে ছাত্রছাত্রী ও স্কুলগুলি এই স্বীকৃতি পায়। আমরা সেটা বন্ধ করতে চাই না।’ টপারদের জন্য অবশ্য আলাদা করে কোনও সার্টিফিকেট বা মেডেল ইস্যু করে না পর্ষদ। আর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘আমি মনে করি না যে মেরিট লিস্ট প্রকাশের মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হয়। প্রতিযোগিতা জীবনের সব স্তরে থাকে। একটা মেধাতালিকা প্রকাশ না-করার মাধ্যমে তা কমানো যায় না। বরং যারা স্বীকৃতির যোগ্য, তাদের বঞ্চিত করা হয়।’

তবে কাউন্সিল যে মেধাতালিকা প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে খুশি আইসিএসই-আইএসসি স্কুলগুলি। ডিপিএস নিউ টাউনের অধ্যক্ষা সোনালি সেন বলেন, ‘এটা তো ঠিক, যে কয়েক নম্বরের হেরফেরে কত ছাত্রছাত্রী মেরিট লিস্টে জায়গা করে নিতে পারে না। র‍্যাঙ্কিংটাই তো জীবনে সব নয়। ধারাবাহিক ভাবে ভালো ফল করাটাই আসল কথা।’ রামমোহন মিশন স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাসের কথায়, ‘একবার মেরিট লিস্ট প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেয় কাউন্সিল। কিন্তু পরে নানা মহলের চাপে বেশ ক’বছর ধরেই তা প্রকাশ করা হচ্ছিল। কিন্তু এতে যারা অল্পের জন্য তালিকায় জায়গা করে নিতে পারে না, তাদের মনে চাপ তৈরি হয়। সেটা না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।’

যদিও এরপরও কোনও কোনও মহল থেকে বিভিন্ন স্কুলের টপার খুঁজে বের করার কাজ থামেনি। কিন্তু এই ‘টপার’দের কোনও সরকারি স্বীকৃতি নেই। মডার্ন হাই স্কুলের ডিরেক্টর দেবী করের মতে, ‘আমি কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে খুব খুশি হয়েছি। কারণ, তালিকার কোনও মানে হয় না। এই মেরিট লিস্ট কেউ মনে রাখে না।’

এই ধরনের আরও খবর জানতে এই সময়ে আসুন। লেটেস্ট নিউজ, শহরের তাজা খবর, দেশের খবর, ব্যবসার খবর, খেলার আপডেট, দৈনিক রাশিফল এবং লাইফস্টাইলের টিপস জানুন। আর ভিডিয়োর জন্য রয়েছে TimesXP

2024-05-07T06:04:54Z dg43tfdfdgfd