দশ দিন, ব্যাগহীন! পড়ুয়াদের স্ট্রেস কমাতে প্রস্তাব কেন্দ্রের

এই সময়: স্কুল-পড়ুয়াদের শারীরিক ও মানসিক বোঝা কমানোর নয়া উদ্যোগ শুরু করল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ুয়াদের বছরে দশটা দিন এমন হবে যে দিনগুলোতে তাদের ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেতে হবে না। ওই দিনগুলোতে আনন্দের পরিবেশে পড়ুয়াদের অ্যাক্টিভিটি বেসড লার্নিংয়ের কথা বলেছে কেন্দ্র।

অর্থাৎ ওই দিনগুলোতে ছেলেমেয়েরা স্কুলে গিয়ে খেলবে, ক্যুইজ় করবে, ছবি আঁকবে বা তাৎক্ষণিক বক্তৃতার মাধ্যমে শিখবে। স্কুল চাইলে ওই দিনগুলোতে পড়ুয়াদের স্থানীয় কোনও শিল্পীর কাছে পাঠাতে পারে, যাতে তারা জানতে পারে শিল্পীরা কী ভাবে ছবি আঁকেন বা মূর্তি গড়েন। এলাকার কোনও দর্শনীয় স্থান, ঐতিহাসিক মনুমেন্টেও ছাত্রছাত্রীরা ছোট ট্যুরে যেতে পারে।

বহু বছর ধরেই স্কুলপড়ুয়াদের ব্যাগের ওজন কমানো নিয়ে চর্চা চলছে। চিকিৎসক ও গবেষকরা জানিয়েছেন, অল্প বয়সে ব্যাগের বিপুল বোঝা শারীরিক নানা ক্ষতি করছে ছাত্রছাত্রীদের। তাদের ঘাড়, শোল্ডার, স্পাইনে নানা রোগ বাসা বাধছে। মনের উপরেও প্রভাব ফেলে ব্যাগের বোঝা। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের মতে, ‘ব্যাগ কাঁধে স্কুলের পথে যেতে অনেক বাচ্চারই একঘেয়ে লাগে। ফলে পড়াশোনায় আগ্রহ, স্কুলের প্রতি আকর্ষণ কমে আসে। প্রভাব পড়ে তার স্বাভাবিক বোধ-বুদ্ধি এবং বৃদ্ধিতেও। অ্যাটেনশন ডেফিসিয়েন্সি আছে এমন বাচ্চাদের কাছে রোজ ব্যাগ কাঁধে স্কুল যাওয়া আরও চাপের।’

কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ‘এই চাপ কমাতে এবং স্টেস-ফ্রি ভাবে পড়াশোনা করাতেই দশ দিন ব্যাগহীন ক্লাসের কথা বলা হয়েছে। যা নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-তেও বলা হয়েছিল।’ কিন্তু মোটের উপরে বাচ্চাদের স্কুলে ক্লাস থাকে বছরে ২৪৮ থেকে ২৫০ দিনের মতো। তার মধ্যে মাত্র ১০ দিনে কি কিছু হবে? নীলাঞ্জনা মনে করেন, ‘১০টা দিন এমন কিছুই নয়। বাচ্চাদের মনেই হবে না ওই ১০ দিন স্কুলে তারা ব্যাগ কাঁধে যায়নি। তবে স্কুলে গিয়ে যদি সত্যিই একটা আনন্দ-পরিসর তারা পায়, মজার ছলে শিখতে পারে, আনন্দ করতে পারে--সেই দিনগুলোকে বাচ্চারা অবশ্যই মনে রাখবে। তাই এই দিন আরও বাড়ানোর কথা ভাবা যেতে পারত।’

সুকান্ত বলছেন, ‘এই দশ দিন কার্যকরী হবে কিনা, এটা এখনই বলা মুশকিল। আগে এটা শুরু হোক, সাফল্য এলে অবশ্যই এই সময় বাড়ানো যায় কিনা আমরা ভেবে দেখব।’

কী প্রতিক্রিয়া স্কুলগুলির?শহরের বহু বেসরকারি ও সরকারি স্কুলের দাবি, তারা নানা ভাবে ব্যাগের বোঝা কমানোর ব্যবস্থা করেছে। যার সঙ্গে মিল আছে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকারও। ইন্দাস ভ্যালি ওয়ার্ল্ড স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল প্রিয়দর্শিনী গুহ বলেন, ‘আমাদের স্কুলে বছরে অন্তত সাত-আট দিন এমন থাকে যে দিনগুলোতে ব্যাগ নিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলে আসতে হয় না। তা ছাড়া এমনি দিনগুলোতেও আমরা পড়ুয়াদের বলি টেক্সট বুক বেশি ক্যারি না করতে। যাতে ব্যাগের ওজন বেশি না হয়।’

ভারতীয় বিদ্যাভবন, অভিনব ভারতী, রামমোহন মিশনের মতো স্কুলও নানা ভাবে ব্যাগের বোঝা কমানোর ব্যবস্থা করেছে। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, ‘মাসে চারটে শনিবারের মধ্যে দুটো শনিবার আনন্দ-পরিসরে বাচ্চারা ক্লাসের বাইরে ক্যুইজ়, বিতর্ক, তাৎক্ষণিক বক্তৃতার মাধ্যমে সময় কাটায়। আর দু’টি শনিবার উজ্জ্বীবন-চর্চার মাধ্যমে নানা ধরনের আলোচনায় অংশ নেয়। ওই দিনগুলোতে এমনিতেই ব্যাগ নিয়ে আসার প্রয়োজন পড়ে না আমাদের স্কুলে।’

টাকি বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক বলেন, ‘ছোটোদের আমরা এমনিতেই বই কম আনতে বলি। বড়দেরও বইয়ের ব্যাগ যাতে ভারী না হয়, সে পরামর্শ দেওয়া হয়।’ রামমোহন মিশন স্কুলের প্রিন্সিপাল সুজয় বিশ্বাসের সংযোজন, ‘আমি কেন্দ্রীয় নির্দেশিকাকে স্বাগত জানাচ্ছি। ব্যাগের বোঝা কমানো শুধু নয়, এর মাধ্যমে পড়ুয়ারা পুথিগত বিদ্যার বাইরে বেরিয়ে জগৎ-সংসার সম্পর্কে ওয়াকিবহালও হতে পারবে।’

এই ধরনের আরও খবর জানতে এই সময়ে আসুন। লেটেস্ট নিউজ, শহরের তাজা খবর, দেশের খবর, ব্যবসার খবর, খেলার আপডেট, দৈনিক রাশিফল এবং লাইফস্টাইলের টিপস জানুন। আর ভিডিয়োর জন্য রয়েছে TimesXP

2024-09-08T03:20:08Z dg43tfdfdgfd