INDIA MALDIVES NEWS: ভারতীয়দের দেশে আসতে অনুরোধ মলদ্বীপ সরকারের, বরফ গলাতে ভারত সফরে বিদেশমন্ত্রী

ভারত ও মলদ্বীপের মধ্যে সম্পর্ক এখনও সহজ হয়নি। এমনই পরিস্থিতিতে, মলদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রী ভারতীয়দের মলদ্বীপে আবার ভ্রমণের আহ্বান জানিয়েছেন। সে দেশের পর্যটন-নির্ভর অর্থনীতিতে ভারতীয়দের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন মলদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রী ইব্রাহিম ফয়সাল। এরই মধ্যে ভারত সফরেও এসেছেন মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী মুসা জামির। চিনপন্থী মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম মলদ্বীপের কোনো মন্ত্রী ভারত সফরে এসেছেন।

এ সময় বৃহস্পতিবার তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেছেন। দুই নেতার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময়, জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারত সর্বদা প্রতিবেশী প্রথম নীতি অনুসরণ করে। দুই দেশের সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থের উপর ভিত্তি করে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে মলদ্বীপকে সমর্থনকারী গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে ভারতও অন্যতম। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, আমাদের অনেক প্রকল্প মলদ্বীপের জনগণকে উপকৃত করেছে। ভারতও অনেক অনুষ্ঠানে মলদ্বীপকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

  • মলদ্বীপ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়

মলদ্বীপ ছাড়ার আগে জামির বলেছিলেন, আমরা ভারত ও মলদ্বীপের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করব, যাতে উভয় দেশের জনগণ এর সুবিধা নিতে পারে। আগামীকাল অর্থাৎ ১০ মে মলদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার শেষ তারিখও। এমতাবস্থায় মুসার এই ভারত সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। মুসা এর আগে জানুয়ারিতে উগান্ডায় জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এরপর উভয় নেতাই মলদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন। বৈঠকের পর মুসা বলেছিলেন, মলদ্বীপ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়।

উল্লেখ্য, মলদ্বীপ এমনই একটি দ্বীপ দেশ, যেখানকার জীবিকার প্রধান উৎস হল পর্যটন। আর এই পর্যটন শিল্পে ভারতীয়দের অবদান ছিল ব্যাপক। ভারতীয় পর্যটকরা মলদ্বীপ এড়িয়ে যাওয়ায়, দ্বীপ দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যে ভারত থেকে আগমনের সংখ্যা ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ভারত এখন মলদ্বীপের ভ্রমণকারীদের তালিকায় ষষ্ঠ তম স্থানে নেমে এসেছে। এ প্রসঙ্গে আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মলদ্বীপের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ নাশিদ।

  • ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দিল মলদ্বীপ

পর্যটন মন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের একটি ইতিহাস আছে। আমাদের নবনির্বাচিত সরকারও ভারতের সঙ্গে, একসঙ্গে কাজ করতে চায়। আমরা সবসময় শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে বিশ্বাস রাখি। আমাদের জনগণ এবং সরকার আগত ভারতীয়দের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাবে। পর্যটন মন্ত্রী হিসেবে আমি মলদ্বীপের পর্যটনের অংশ হওয়ার জন্য ভারতীয়দের অনুরোধ করতে চাই। আমাদের অর্থনীতি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।

  • ভারত ও মলদ্বীপের মধ্যে কেন বিবাদ শুরু হয়েছে

গত বছর মলদ্বীপে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারে মোহাম্মদ মুইজু 'ইন্ডিয়া আউট' স্লোগান দিয়েছিলেন। এ নিয়ে তিনি অনেক সমাবেশও করেছেন। মুইজ্জু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি রাষ্ট্রপতি হলে তিনি দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের সরিয়ে দেবেন। এর ভিত্তিতেই তিনি নির্বাচনে জয়লাভও করেছিলেন।

এরপর গত বছরের ১৭ নভেম্বর, মুইজু, যিনি চিনের সমর্থক বলে কথিত, মলদ্বীপের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়ার পর ভারত ও মলদ্বীপের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে গিয়েছিল। ফলে মলদ্বীপ সেখানে অবস্থানরত ৮৮ ভারতীয় সেনাকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৫১ জন সেনা ফিরে এসেছিলেন। 

আসলে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছয় জানুয়ারি 'এক্স'-এ লাক্ষাদ্বীপের কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো শেয়ার করেছিলেন, যা দেখে মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন। এই ঘটনা নিয়ে ভারতবাসীও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। এরই পাশাপাশি মলদ্বীপকে বয়কট করতে এবং ভ্রমণের জন্য সেখানে না যাওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা তুলেছিল। প্রতিশোধ হিসাবে, অনেক ভারতীয় পর্যটন সংস্থা এবং পর্যটকরা মলদ্বীপকে বয়কট করতে শুরু করে দিয়েছিলেন।

এদিকে আবার মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট চিন সফরে গিয়ে ফেরার পর বলেছিলেন, কোনও দেশই তাঁকে হুমকি দিতে পারবে না। মুইজু মলদ্বীপকে সমর্থন করতে চিনের জনগণকে তাঁর দেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। এর পর ভারতের সঙ্গে হাইড্রোগ্রাফিক সমীক্ষা চুক্তিও শেষ করে দিয়েছিল মলদ্বীপ। এর ফলে মলদ্বীপে আসা ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে।

  • ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা ৪২ শতাংশ কমেছে

সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ভারত থেকে মলদ্বীপে আসা পর্যটকদের সংখ্যা ৪২ শতাংশ কমে গিয়েছে। বর্তমানে, ভারতীয় পর্যটকরা মলদ্বীপের চেয়ে লাক্ষাদ্বীপ বা আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে চলেছেন।

2024-05-09T16:39:48Z dg43tfdfdgfd