মোদী-ভরসাতেই জিততে চান সুষমার মেয়ে বাঁসুরী স্বরাজ

নিউদিল্লি লোকসভা কেন্দ্রে গতবার বিজেপি প্রার্থী করেছিল আইনজীবী মীণাক্ষি লেখিকে। তিনি জিতেছিলেন। তাকে মন্ত্রীও করা হয়েছিল। কিন্তু এবার তাকে আর প্রার্থী করা হয়নি। তার জায়গায় প্রার্থী করা হয়েছে আরেক নারী আইনজীবী বাঁসুরী স্বরাজকে। তার আরেকটা পরিচয় হলো তিনি সুষমা স্বরাজের মেয়ে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অকালপ্রয়াত সুষমা স্বরাজ ছিলেন জনপ্রিয় নেত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় কেউ সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে তার সাহায্য চাইলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য করতে উদ্যোগী হতেন। নিজে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। অনেকের সমস্যা দূর করে তিনি রীতিমতো জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন তুখোড় বক্তা।

এহেন সুষমার প্রতি সহানুভূতি-ভোট নেয়ার জন্যই সম্ভবত বাঁসরীকে প্রার্থী করা হয়েছে। না হলে রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ এবং এতদিন পর্যন্ত সেভাবে সক্রিয় না থাকা বাঁসুরীকে নিউদিল্লির মতো গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ আসনে প্রার্থী করা হতো না। একসময় এই আসনে সুষমা ছাড়াও লালকৃষ্ণ আডবাণী, বিজয় কুমার মালহোত্রার মতো হেভিওয়েট বিজেপি নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

দিল্লির বাঙালিবহুল চিত্তরঞ্জন পার্কে প্রচারে এসে তার মা সুষমা স্বরাজের প্রসঙ্গ বাঁসুরী আনলেন ঠিকই, কিন্তু খুব বেশি নয়। প্রথমে ও শেষের দিকে একটু উল্লেখ করলেন ঠিকই, কিন্তু তার প্রচার ছিল মোদী-ময়। তিনি স্পষ্ট করে বললেন, তাকে ভোট দেয়া মানে নরেন্দ্র মোদীকে ভোট দেয়া, তার হাত শক্ত করা। এমনকী 'নরেন্দ্র মোদী রাম রাম' স্লোগান দিলেন। টেনে আনলেন রামমন্দির প্রসঙ্গ। বললেন, নরেন্দ্র মোদীর জন্য পাঁচশ বছর পর শ্রীরাম তার মন্দিরে ফিরতে পেরেছেন। পুরো দেশের মানুষ মোদীর পরিবার, তিনিও সেই পরিবারের সদস্য হিসাবে পরিবারেোর মানুষদের কাছে ভোট দেয়ার অনুরোধ নিয়ে এসেছেন।

এসব ক্ষেত্রে মায়ের সঙ্গে তুলনা আসা স্বাভাবিক। চিত্তরঞ্জন পার্কের ওই জনসভায় উপস্থিত দিলীপের মনে হয়েছে, বাঁসুরী কোনোভাবেই সুষমার মতো বক্তা নন। সুষমার ভাষণে আবেগ ও যুক্তি একইসঙ্গে কাজ করত। তিনি মানুষকে ভাষণ দিয়ে প্রভাবিত করতে পারতেন। হতে পারে বাঁসুরী এই প্রথম ভোটের ময়দানে নেমেছেন। তাই তাকে এখনই বিচার করার সময় আসেনি। তবে মায়ের মতো বক্তা হতে গেলে তাকে যে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে তাতে দিলীপের কোনো সন্দেহ নেই।

বাঁসুরী অবশ্য অন্য পন্থা নিয়েছেন। তিনি মঞ্চ থেকে নেমে এলেন একেবারে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে। চারিদিকে ঘুরে ঘুরে বলতে লাগলেন। অন্য সব রাজনীতিকদের মতো কথা দিলেন, তাকে জেতালে তিনি সবসময় এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন। লোকসভায় তাদের কথাই বলবেন। বারবার বললেন, তাকে জেতানো মানে মোদীকেই জেতানো।

কিছুক্ষণ ভাষণ দিয়ে বাঁসুরী চলে গেলেন। কিছুটা দূরে নিজের খাবারের দোকানে বসেছিলেন এক মধ্যবয়স্ক। বাঁসুরীকে দেখতে গেলেন না, প্রশ্নটা করতেই কিঞ্চিত বিরক্তি সহকারেই বললেন, ''দেখছেন, জনসভার জন্য দোকানে কেউ আসছে না, দেখতে গিয়ে করবটা কী? তাতে পেট চলবে? রাজনীতিকরা জেতার জন্য নানান কথা বলবেন। তারা তাদের কাজ করবেন। কিন্তু আমাদের তো দোকান ছেড়ে গেলে চলবে না।''

জনসভার একদম পিছনের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বিজেপি কর্মী। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সেই বিজেপি কর্মীর মতে, ''বাঁসুরীর ভাষণ শুনে হতাশ হলাম। মনে হলো, তাঁকে লিখে দেয়া ভাষণ পড়লেন। সুষমার জন্য তিনি প্রার্থী হয়েছেন এখানে, কিন্তু সেই তুখোড় রাজনীতিক মায়ের ছাপ খুব বেশি পেলাম না। হতে পারে, ভবিষ্যতে তিনি পরিণত হবেন। তবে মনে রাখতে হবে, তিনি জিতলে তার মায়ের প্রতি মানুষের সাহনুভূতি অনেকটাই কাজ করবে।''

বাঁসুরী যখন এই ভাষণ দিচ্ছেন, তখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেছেন। তিনিও রোড শো করছেন। তাতে প্রচুর মানুষ আসছেন। কেজরিওয়াল প্রশ্ন তুলেছেন, মোদী নিজেই নিয়ম করেছিলেন, ৭৫ বছর হয়ে গেলে তিনি অবসর নেবেন। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ৭৫ বছর হয়ে যাবেন। তখন তো তাহলে অমিত শাহকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। মোদী কি নিজের তৈরি করা আইন নিজে ভাঙবেন?

এসব প্রসঙ্গ বাঁসুরী তার ভাষণে আনেননি। তিনি কেবল মোদী, রামমন্দির এবং মোদী-পরিবার, সুষমা স্বরাজের মধ্যেই ভাষণ সীমাবদ্ধ রেখেছেন। তিনি জানেন, নিউদিল্লির এই লড়াইয়ে মোদীই তাকে জেতাতে পারেন, আর সেই জয়ের রাস্তা মসৃন করে দিতে পারে মা সুষমার প্রতি সহানুভূতি। তাই বিরোধীদের পরিবারবাদ নিয়ে সদা সোচ্চার মোদী সুষমার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর তার মেয়েকে প্রার্থী করেছেন এখানে।

প্রতিবেদন: গৌতম হোড় (নতুন দিল্লি)

2024-05-14T05:19:19Z dg43tfdfdgfd