ASANSOL NEWS : মধুপুরের অবাক জলপানের ইঁদারা সংস্কার

বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল

বাঙালির হাওয়া বদলের পশ্চিম, যার জলের গুণাগুণ নিয়ে কথা শেষই হতো না উনিশ-বিশ শতকের উচ্চবিত্ত বাঙালির। ব্যারিস্টার, ডাক্তার, শিক্ষাবিদ, সম্পন্ন ব্যবসায়ীরা সেই স্বাস্থ্যকর পানীয়ের লোভে পাড়ি জমাতেন মধুপুর, গিরিডি, শিমুলতলা, জসিডি। অন্তত মাসখানেকের জোগাড়যন্ত্র হোল্ডল-ট্রাঙ্কে ভরে কুলি, ভৃত্য, রাঁধুনি সমেত একেবারে সংসার পেতে ফেলা। বাঙালির সেই শখের প্রাণ পশ্চিমের স্মৃতি বহু দিনই অতীত।

স্মারকচিহ্নের মতো রয়ে গিয়েছে কিছু নিদর্শন। যার মধ্যে রয়েছে মধুপুর-গিরিডি সেকশনের মহেশমুন্ডা স্টেশনের বিখ্যাত ইঁদারা। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে সম্প্রতি রেলের আসানসোল ডিভিশন ওই ইঁদারাটির সংস্কার করেছে। অবাক জলপানের সেই ইঁদারার সংস্কারে খুশি অনেকেই। এই ইঁদারার জলই মহেশমুন্ডা স্টেশন থেকে ট্রেনে চলে আসত কলকাতায়। তার পর পৌঁছে যেত জোড়াসাঁকোর দ্বারকানাথ ঠাকুর কিংবা পাথুরিয়াঘাটের যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের বাড়িতে।

কলকাতায় আরও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির গলা ভিজত মহেশমুন্ডার হজম-শক্তিবর্ধক সেই জলে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, 'মহেশমুন্ডার ইঁদারার জল দ্বারকানাথ ঠাকুর ব্যবহার করতেন। এই স্টেশন থেকে বিভিন্ন পাত্রে ট্রেনের মাধ্যমে সেই জল আনা হতো জোড়াসাঁকোর বাড়িতে। সেই সময় এই ইঁদারা ছিল হাজার মানুষের ভরসা। সাধারণ যাত্রীরাও রেল ভ্রমণের সঙ্গে বিভিন্ন পাত্রে নিয়ে যেতেন এই জল।'

আসানসোল স্টেশন থেকে ১০৮ কিমি দূরে মধুপুর। সেখান থেকে মহেশমুন্ডার দূরত্ব ২৭ কিমি। এখানেই সোয়া ৪ মিটার ব্যাসের সেই হজমি-জলের ইঁদারা। মধুপুরের বাসিন্দা অধ্যাপক ও সাহিত্যিক অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, দ্বারকানাথ, যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের পরিবারের জন্য এখান থেকে নিয়মিত পিতল বা তামার ঘড়ায় খাবার জল ট্রেনে পৌঁছত কলকাতায়।

মধুপুরে যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের টেগোর কট বলে একটি বাড়ি রয়েছে এখনও। তিনি বলেন, 'এক সময়ে পশ্চিমের হাওয়া ও জলের কারণে কলকাতা থেকে প্রচুর মানুষ মধুপুর, গিরিডি, শিমুলতলায় বেড়াতে আসতেন। তাঁরাও এই জল সংগ্রহ করতেন, এটা আমরাও দেখেছি।' বিশিষ্ট পর্যটক ও ভ্রমণ সাহিত্যিক উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখ করে অনাথবন্ধু বলেন, 'উনি মধুপুরে যখন আসতেন, তখন মহেশমুন্ডার জল তাঁর ওখানকার বাড়িতে আনা হতো।

এটা হজমি জল নামে পরিচিত ছিল।' এখনও শীতে বা পুজোয় মধুপুর বা গিরিডিতে যাঁরা বেড়াতে আসেন, তাঁরাও এই জল সংগ্রহ করেন। এক সময় গিরিডি থেকে ট্রেনের দু'টি যাত্রী বগি মহেশমুন্ডার জল নিয়ে মধুপুর পৌঁছত। তার পর সেই দুই বগি জোড়া লাগত হাওড়া-দানাপুর এক্সপ্রেসে। ভোরে হজমি জল পৌঁছে যেত কলকাতায়।

2023-06-03T05:01:45Z dg43tfdfdgfd