HEAT WAVE : ভরদুপুরের গনগনে রোদে বাড়ির পথে খুদে পড়ুয়ারা

এই সময়: ঘড়ির কাঁটায় ১২টা থেকে দুপুর ৩টের মধ্যে কোনও একটা সময়। ৪০ ডিগ্রি পেরোনো কলকাতায় তখন নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া চিকিৎসকরা সবাইকেই বাইরে বেরোতে বারণ করছেন। অথচ ভরদুপুরের সেই সময়েই প্রবল তাপে ঝলসে ফিরতি পথ ধরছে ওরা।

পিঠে ভারী ব্যাগ, পরনে ইউনিফর্ম, পায়ে মোজা-জুতো আর মাথার উপরে গনগনে সূর্য। কেউ শিকার হচ্ছে ডিহাইড্রেশন, বমি-জ্বরের। কারও বা ক্লান্ত পা আর চলে না। তবু এই হা-ক্লান্ত অবস্থাতেই স্কুল ছুটি হলে পুলকার, বাস বা ট্রেনে বাড়ির পথ ধরছে কলকাতার বেশ কিছু বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা।

সকলেই যে কলকাতার বাসিন্দা, তা-ও নয়। শহরতলি থেকেও অনেকে আসে মহানগরের স্কুলে পড়াশোনা করতে। তাদের হাল আরও খারাপ। সঙ্গে রয়েছে অভিভাবকদের হয়রানি। তাঁদেরও এই গরমে ছেলেমেয়েকে নিয়ে ফিরতি পথ ধরতে হচ্ছে। যাঁদের বাড়ি দূরে, তাঁদের অনেকে বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফেরেন না। কোথাও বসে অপেক্ষা করেন। কিন্তু এই তাপমাত্রায় কোথায় অপেক্ষা করবেন? সবই তো তেতে রয়েছে!

প্রবল গরমে গত ২২ এপ্রিল থেকে সরকারি স্কুলগুলিতে কিন্তু গরমের ছুটি দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। শহর ও শহরতলির বহু বেসরকারি স্কুলেও সেই নির্দেশ মেনে ছুটি পড়ে গিয়েছে। আবার, অনেক প্রাইভেট স্কুলে চলছে পুরোদস্তুর অনলাইন ক্লাস। এমনকী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তাপপ্রবাহের কারণে ২ থেকে ১১ মে সমস্ত কলেজ ও ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসগুলিতে পঠনপাঠন বন্ধ থাকবে। তার মধ্যেই খুদে ছাত্রছাত্রীদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছে কলকাতারই বেশ কিছু বেসরকারি স্কুল। যেখানে ক্লাস শেষে স্কুল ছুটি হচ্ছে বেলা ১২টা থেকে দুপুর ৩টের মধ্যে কোনও এক তপ্ত সময়ে।

যেমন, দক্ষিণ শহরতলির একটি নামজাদা বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১২টায়। পড়ুয়াদের বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে বেজে যাচ্ছে দেড়টা। তখন সূর্য মধ্যগগনে। বাড়ি ফিরতে গিয়ে পড়ুয়াদের অনেকে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে যে আর খাওয়ার এনার্জিও থাকছে না তাদের। কোনওমতে পেটে কিছু দিয়েই ঘুম। উঠতে উঠতে গড়িয়ে যাচ্ছে বিকেল।

স্কুলের এক উদ্বিগ্ন অভিভাবকের বক্তব্য, ‘এখন তবু শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। এই তাপে হিট স্ট্রোক হলে কী হবে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। মেয়েকে আর স্কুলে পাঠাব না বলে ঠিক করেছি।’ হাওড়ার বাসিন্দা এক অভিভাবকের সন্তান দক্ষিণ কলকাতার প্রতিষ্ঠিত স্কুলের পড়ুয়া। এই সোমবারই বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি। শুরু হয় বমি। ওই অভিভাবকও মেয়েকে স্কুলে না-পাঠানোর পথ ধরেছেন।

ফলে একদিকে যেমন ছেলেমেয়েদের ধকল যাচ্ছে, অন্যদিকে তেমনই ক্লাস মিস করায় পঠনপাঠনে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু অভিভাবকরা নিরুপায়।

তা ছাড়া তাঁরাও তো একই রকম হয়রানির শিকার। কলকাতার বহু স্কুলে পাঠরত দমদম, দক্ষিণেশ্বর, জোকা, হাওড়া-সহ আশপাশের নানা এলাকার অভিভাবকদের একাংশ (মূলত মায়েরা) সন্তানদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আর বাড়ি ফেরেন না। স্কুল চত্বরেই বা আশপাশে এই গনগনে রোদে বসে থাকেন। কাছাকাছি কোথাও একটু শেড পেলে নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করছেন তাঁরা।

কী বলছে স্কুলগুলি? অভিনব ভারতীর অধ্যক্ষা শ্রাবণী সামন্ত বলেন, ‘৮ মে থেকে আমাদের স্কুলে গরমের ছুটি। আপার কেজি পর্যন্ত বাচ্চাদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। বাকিদের সাড়ে ১১টার মধ্যেই ছুটি হয়ে যাচ্ছে। তবে কোনও অভিভাবক না চাইলে, বাচ্চাকে স্কুলে না-ও পাঠাতে পারেন। আমরা তেমন নোটিস দিয়েছি।’ ডিপিএস নিউ টাউনের অধ্যক্ষা সোনালি সেনের বক্তব্য, ‘ক্লাস টু পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসছে না। বাকিদের সাড়ে ১১টায় ছুটি। এখন স্কুলে আসা বাধ্যতামূলকও নয়।’

তাঁর ব্যাখ্যায়, আজ, বুধবার ১ মে-র ছুটি। শনিবার ও রবিবার সপ্তাহান্ত। আর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী ৫-৬ মে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, তাপমাত্রাও কমবে। তাই অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তার আগে? সাড়ে ১১টায় স্কুল থেকে বেরিয়ে যে বাচ্চারা প্রবল গরমে বাড়ি ফিরছে, তাদের কী হবে? সদুত্তর নেই।

এই ধরনের আরও খবর জানতে এই সময়ে আসুন। লেটেস্ট নিউজ, শহরের তাজা খবর, দেশের খবর, ব্যবসার খবর, খেলার আপডেট, দৈনিক রাশিফল এবং লাইফস্টাইলের টিপস জানুন। আর ভিডিয়োর জন্য রয়েছে TimesXP

2024-05-01T05:13:29Z dg43tfdfdgfd