বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্র ২০২৪: একদা RSP দুর্গে গড়রক্ষার লড়াই সুকান্তের, জানুন অতীতের ফলাফল

বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রটি পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। তথ্য বলছে, ১৯৬২ সালে আত্মপ্রকাশ করে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্র। পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী পার্টি (আরএসপি) সর্বাপেক্ষা বেশি বার জয়লাভ করে। তবে বর্তমানে এই কেন্দ্রটির সাংসদ বিজেপি'র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ২০১৯ সালে প্রায় ১২ লক্ষ ৫৪ হাজার মানুষ লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি৷ ইটাহার বিধানসভা কেন্দ্র, কুশমন্ডি বিধানসভা কেন্দ্র, কুমারগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র, বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্র, তপন বিধানসভা কেন্দ্র, গঙ্গারামপুর বিধানসভা কেন্দ্র, হরিরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে বালুরঘাট লোকসভার মধ্যে৷ এর মধ্যে বালুরঘাট এবং হরিরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র দু'টি বাদে বাকি পাঁচটি কেন্দ্রই তফশিলি জাতি বা উপজাতি'র প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত।

এবার বালুরঘাটে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে কড়া লড়াইয়ে ফেলতে তৃণমূলের ভরসা হরিরামপুরের বিধায়ক তথা রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য বিপ্লব মিত্র। অন্যদিকে আরএসপি-র হয়ে ময়দানে আছেন জয়দেব সিদ্ধান্ত। এই আসনে তৃণমূলকে জেতাতে জানপ্রাণ লাগিয়ে দিয়েছে নেতৃত্ব। নিজের তাজ রক্ষা করাটাই এখন সুকান্তবাবুর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় দফার ভোটে ২৬ এপ্রিল নিজেদের জনমত ব্যক্ত করার সুযোগ পাবেন এখানকার মানুষ। 

১৯৫২ সালে দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে এই অঞ্চলটি পশ্চিম দিনাজপুর সংসদীয় কেন্দ্রের অন্তর্গত ছিল। জয় যুক্ত হয়েছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সুশীল রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। দ্বিতীয় লোকসভা নির্বাচনে ১৯৫৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সেল্কু মারডি জয়যুক্ত হন এই পশ্চিম দিনাজপুর কেন্দ্র থেকে। এর পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে প্রথম বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই নির্বাচনে আসনটিতে জয়যুক্ত হন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) -এর সরকার মুরমু এর পরবর্তী ১৯৬৭ লোকসভা নির্বাচনে ফের আসনটিতে জয়যুক্ত হন জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী জে এন প্রামাণিক। ১৯৭১ সালের নির্বাচনে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রটি থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজেন্দ্রনাথ বর্মন ২৪ শতাংশ ভোটের মার্জিনে জয়যুক্ত হন। এই নির্বাচন থেকে লোকসভার প্রেক্ষিতে সিপিআইএম আগের তুলনায় বেশি জনসমর্থন আদায় করে। কংগ্রেস যেখানে ২৮ শতাংশ ভোট পায়, সেখানে ৩৪ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পায় সিপিআইএম। সিপিআই এই নির্বাচনের ১০ শতাংশ ভোট শেয়ার পেয়েছিল। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা রাজ্যজুড়ে ফের জাতীয় কংগ্রেসের ভোট শেয়ার কিছুটা বৃদ্ধি পায় এবং সিপিআইএম-এর ভোট শেয়ার কিছুটা কমে। উল্লেখযোগ্য ভাবে এই নির্বাচনে কংগ্রেস বিরোধী ভোট পায় ভারতীয় লোকদল। বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে এই নির্বাচনে বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী পার্টির পলাশ বর্মন জয়যুক্ত হন ১৪ শতাংশের বেশি ভোটের মার্জিনে।

১৯৮০ সালের লোকসভা নির্বাচনেও বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে আরএসপি’র পলাশ বর্মন ১৫ শতাংশের বেশি ভোটের মার্জিনে জয় যুক্ত হন। তবে, ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে পলাশ বর্মন জয়যুক্ত হলেও তার ভোটের শেয়ার বেশ অনেকটাই কমে যায়। এর পরবর্তী একটি দীর্ঘ সময়ে আরএসপি এই কেন্দ্র থেকে জয়যুক্ত হতে থাকে। ১৯৮৯ এবং ১৯৯১ সালে পলাশ বর্মন এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে থেকে ২০০৪ পর্যন্ত এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন আরএসপি’র রণেন বর্মন। ২০০৯ সালেও এই কেন্দ্র থেকে আরএসপি জয়লাভ করে। পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে ২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের তারকা প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ জয়যুক্ত হন ১০ শতাংশের অধিক ভোটের ব্যবধানে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে দেশজুড়ে গেরুয়া ঝড়ের মাঝে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রটি তৃণমূলের হাতছাড়া হয়ে যায়। ২.৮ শতাংশ ভোটের মার্জিনে সুকান্ত মজুমদার পরাজিত করেন অর্পিতা ঘোষকে। দীর্ঘদিনের আরএসপি-এর শক্ত ঘাঁটিতে বর্তমানে তৃণমূল এবং বিজেপির জোরদার লড়াই।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের দেখে নেওয়া যাকে একনজরে৷ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গড়ে ৮৬-৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল এই বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে। এই বিধানসভা নির্বাচনে ইটাহার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়যুক্ত হন টিএমসি’র মোশারফ হোসেন। তৃণমূল কংগ্রেসের এই প্রার্থীর সঙ্গে নিকটবর্তী প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ছিল ২২ শতাংশ। তপশিলি জাতি সংরক্ষিত কুশমন্ডি বিধানসভা আসনটিতে জয়যুক্ত হন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী রেখা রায়। কুমারগঞ্জ আসনটিতেও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়যুক্ত হন তোরাফ হোসেন মন্ডল। তবে বালুরঘাট, তপন এবং গঙ্গারামপুরে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে যথাক্রমে অশোক কুমার লাহিড়ী, বুদরাই টুডু, সত্যেন্দ্রনাথ রায় জয়যুক্ত হন। অন্যদিকে হরিরামপুর আসনটি যায় তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। ফলে লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি জয় যুক্ত হলেও বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে চারটি আসনে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কোন পক্ষ এগিয়ে, কোন পক্ষ পিছিয়ে, তা জানার জন্য অপেক্ষা আর কিছু দিন।

2024-04-25T06:24:19Z dg43tfdfdgfd