সুইটি, বেবি সবসময় যৌন আবেদন নয়, মামলার শুনানিতে পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের

‘‌ও সুইটি আর কেঁদো না, আমি আসছি’‌। এটা একটি বাংলা সিনেমার গান। তবে এখানে সুইটি শব্দটি ভাল অর্থে ব্যবহার হয়েছে। এখানে যৌন অর্থ বোঝাচ্ছে না। তাই সমাজের বুকে কোনও নারীকে সুইটি বা বেবি বলে ডাকলে সেটা সবসময় যৌন অর্থে প্রয়োগ বোঝায় না। অনেকেই পরিচিত বা প্রিয়জনকে আদর করে এসব নামে ডেকে থাকে। এই বিশেষণ প্রয়োগ করে ডাকলে কি ইঙ্গিত বদলে যায়? এমনই প্রশ্ন উঠল কলকাতা হাইকোর্টে। আর কাউকে ‘সুইটি’ বা ‘বেবি’ বলে ডাকার অর্থ যৌন হয়রানি নয় বলেই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের। কোস্টগার্ড বা উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক মহিলা কর্মী এই মামলা করেন। আর তাতেই এমন পর্যবেক্ষণের কথা শোনান বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য।

তবে এই একই পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কোনও মহিলা কর্মীকে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা করা হয় অথবা নারীদের যৌন হেনস্থা আইনের অপব্যবহার করা হয় তাহলে সেটা অবশ্যই বিবেচিত হবে। এই মামলায় উপকূলরক্ষী বাহিনীর এক মহিলা কর্মী তাঁর এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জানান, ওই উচ্চপদস্থ আধিকারিক তাঁকে ‘সুইটি’ এবং ‘বেবি’ বলে ডাকেন। এটাই তিনি যৌন হেনস্থা হিসাবে দেখছেন। এমন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, কোস্টগার্ডের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি তা লিখিতভাবে জানান মহিলা। সেখানে ওই আধিকারিক জানান, তিনি যৌন হেনস্থা করার মানসিকতা নিয়ে এই শব্দগুলি ব্যবহার করেননি। তা শুনে ওই মহিলা প্রতিবাদ করেন এবং কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। তখন থেকে আর ওই আধিকারিক ‘বেবি’ বা ‘সুইটি’ বলে ডাকেননি।

আরও পড়ুন:‌ ‘‌পুলিশ যদি বেশি প্রভুভক্তি দেখায় থানা জ্যাম করে রেখে দেব’‌, ফের হুমকি দিলীপ ঘোষের

কলকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়ে দু’‌পক্ষের কথা শুনে পর্যবেক্ষণে জানান, এই শব্দগুলি সবসময় যৌন অনুভূতির সঙ্গে জড়িত হবে সেটা নয়। আদালত এটাও উল্লেখ করেছে যে, অভিযোগকারী মহিলার আপত্তি করার পর অভিযুক্ত আর ‘সুইটি’ ও ‘বেবি’ শব্দের ব্যবহার করেননি। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য উল্লেখ করেন, ‘‌আইন অনুযায়ী যৌনতা সম্পর্কিত কোনও শব্দ ব্যবহার করা যায় না। এখানে তেমন কোনও শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। সুইটি, বেবি কোনওটিই যৌন সম্পর্কে ব্যবহার হয়েছে তা সবসময় বলা যায় না।’‌ এই বিষয়টি ছাড়াও ওই মহিলার অভিযোগ আরও অভিযোগ, শুধু সুইটি, বেবি বলেই ডাকতেন না আধিকারিক, এমনকী তাঁর ঘরে উঁকিও দিতেন। তবে কোনও সিসিটিভি ফুটেজ দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি।

কলকাতা হাইকোর্ট সূত্রে খবর, ওই কোস্টগার্ডের আধিকারিকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাই সবটা খতিয়ে দেখা হবে। ওই মহিলার বিরুদ্ধেও তাঁর সহকর্মীদের নানা অভিযোগ রয়েছে। তাই নিজের পিঠ বাঁচাতে ওই মহিলা এমন অভিযোগ করেছেন কিনা, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে ওই আধিকারিককে ছাড় দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত তদন্ত কমিটি নিয়েছে, সেটাতেই সমর্থন করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে বিচারপতি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, যৌন হয়রানির অভিযোগের যদি অপব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে তা মহিলাদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর হবে।

2024-05-10T05:49:16Z dg43tfdfdgfd