নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে সিইএসসি-কে নির্দেশ

কৌশিক প্রধান, এই সময়

সোমবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 64 বছরের ইতিহাসে রেকর্ড গড়ার দিনেই বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সাধারণ মানুষের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সিইএসসি-কে কড়া নির্দেশ দিলেন। এবার গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দোসর হিসেবে হাজির হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

গত কয়েক দিনে প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে শহরের বহু জায়গায় দিনে-রাতে বিদ্যুৎ না থাকার ভুরি ভুরি অভিযোগ এসেছে। এমনকী, গতকাল রবিবার যেখানে অফিস, স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকে, সেদিনও রাতে বাঘাযতীন, যাদবপুর, নেতাজিনগর, তালতলার মতো এলাকায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সোমবার সিইএসসি-র পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগগুলির প্রসঙ্গে তিনি সিইএসসি-র কাছে কারণ জানতে চান। জবাবে সিইএসসি-র আধিকারিকরা তাঁকে জানান, অনেক গ্রাহক তাঁদের না জানিয়ে এসি লাগানোর জন্য ওভারলোডিং হওয়ার কারণে সিস্টেম ট্রিপ করে গিয়ে সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

তবে তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী সিইএসসি কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য তীব্র ভর্ৎসনা করেন। একই সঙ্গে তিনি সিইএসসি-কে নির্দেশ দিয়েছেন, যেখানে ‘টেকনিক্যাল ফল্ট’ হবে সেখানে অবিলম্বে সিইএসসি-র কাছে যে 100টি জেনারেটর রয়েছে তা দিয়ে অবিলম্বে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করতে হবে। সেই সঙ্গে তিনি আবারও সিইএসসি-কে ম্যানপাওয়ার ও মোবাইল ভ্যান বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, তাঁদের এলাকায় থাকা প্রতি লোকসভা কেন্দ্র পিছু তাঁরা 3-4টি জেনারেটর রেখেছেন, যাতে কোনও কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে পরিষেবা দ্রুত স্বাভাবিক করা যায়। সিইএসসি এবং বণ্টন সংস্থা উভয়েরই দাবি কোথাও লোডশেডিং হচ্ছে না। তাদের না জানিয়ে এসি লাগানোর জন্য সিস্টেমে ওভারলোডিং হয়ে ট্রিপ করে গিয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।

এখানেই প্রশ্ন। কলকাতায় গ্রীষ্মকালে গরম তো প্রতি বছরেই পড়ে। আর এসির ব্যবহার আগেও হতো। তা হলে এবার বণ্টন সংস্থাগুলি এই যুক্তি দিচ্ছে কেন? এক আধিকারিক বলেন, ‘আগে সিইএসসি ও বণ্টন সংস্থা উভয়েই এপ্রিল থেকে জুনের মাঝামাঝি রোজ একই লোডের একটা পূর্বাভাস ধরে আগাম প্ল্যান করত। একই সঙ্গে রোজ যতটা বিদ্যুৎ প্রয়োজন তার থেকে কিছুটা বেশি বিদ্যুৎ তারা কিনে রাখত আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। ওই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ না লাগলে তারা বেচে দিতো। এসব করা যেত কারণ তখন টাকার অভাব ছিল না।’

আর এখন সেই টাকার অভাবেই সব কিছু আটকে গিয়েছে। 2016 সালে শেষবার রাজ্যে বিদ্যুতের মাশুল বেড়েছিল। অথচ, এর মধ্যে খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এমনকী, জ্বালানির দাম বাড়ার জন্য বণ্টন সংস্থাগুলির যে বাড়তি খরচ হয়, তা-ও তারা গ্রাহকদের থেকে নিচ্ছে না।

অন্য এক আধিকারিকের কথায়, ‘আগে যে সমস্ত ট্রান্সফর্মারে ওভারলোডিং হচ্ছে, সেগুলি প্রত্যেক বছর দেখা হতো। কোনও একটা ট্রান্সফর্মারের 70 শতাংশ ক্যাপাসিটি পূর্ণ হলেই সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি-র নর্মস অনুযায়ী সেখানে আর একটা ট্রান্সফর্মার বসাতো বণ্টন সংস্থাগুলি।’ তিনি জানান, প্রয়োজনীয় অর্থ বন্টন সংস্থাগুলির হাতে না থাকায় সেই ক্যাপেক্স-এর কাজই এখন হচ্ছে না।’

পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত নীতিও এই ক্যাপেক্স-এর পথে বাধা সৃষ্টি করছে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ গুহ বলেন, ‘চিরাচরিত শক্তির বদলে প্রতি বাড়িতে সোলার প্যানেল বসানোর উপর জোর দেওয়ার যে নীতি কেন্দ্র নিয়েছে, তাতে ভবিষ্যত ব্যবসা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বণ্টন সংস্থাগুলি।’

এই ধরনের আরও খবর জানতে এই সময়ে আসুন। লেটেস্ট নিউজ, শহরের তাজা খবর, দেশের খবর, ব্যবসার খবর, খেলার আপডেট, দৈনিক রাশিফল এবং লাইফস্টাইলের টিপস জানুন। আর ভিডিয়োর জন্য রয়েছে TimesXP

2024-04-30T14:43:46Z dg43tfdfdgfd