চট্টগ্রামের পটিয়াতে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে ঠিক কী ঘটেছে?

ইসলামের নবীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তির অভিযোগে করা এক মামলায় চট্টগ্রামের পটিয়াতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী একজন যুবককে গ্রেপ্তারের পর কিছু মানুষ থানার সামনে জড়ো হয়ে তাদের হাতে তুলে দেয়ার দাবী জানায়। তারা নিজেরা শাস্তি দিবে বলে দাবি করছিল।

এ দাবিতে থানার ভেতরে ও সামনে অবস্থান নেয় শতাধিক মানুষ।

পুলিশ তাদের সেই দাবি না মানলে থানায় ভাংচুর এবং সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা করা হয়। সেই সময় এক সেনা সদস্যও এতে আহত হয়েছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

পটিয়াতে আসলে কী ঘটেছিল ? ওই যুবকেরই বা কী হয়েছে ?

পটিয়াতে কী ঘটেছিল?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ওঠে পটিয়ার বাসিন্দা পার্থ বিশ্বাস পিন্টুর বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পিন্টুর ফেসবুক থেকে মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় সোমবার পটিয়া থানায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে।

মামলায় ঘটনার সময় ২৮শে সেপ্টেম্বর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, “ইচ্ছাকৃত-ভাবে ইসলাম ধর্মের অবমাননার উদ্দেশ্যে প্রতিহিংসা-বশত প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে কটূক্তি করত ধর্মীয় বিশ্বাসের অবমাননা করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করার অপরাধ”।

মামলাটি করেছেন পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করে। তারা অভিযুক্ত পিন্টুর শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানও দেয়।

সোমবারই দুপুর একটায় চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানা এলাকা থেকে পার্থ বিশ্বাস পিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রেজাউল করিম মজুমদার বিবিসি বাংলাকে বলেন “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে”।

“তার এ পোস্টের কারণে এলাকায় বিভিন্ন ধর্মপ্রাণ মানুষরা ক্ষেপে গেছিল। তারা আক্রমণ করতে পারতো বিভিন্ন জায়গায়। তারপরে তারা তার বিরুদ্ধে যখন রেগুলার পিটিশন দিয়েছে আমরা রেগুলার মামলা নিয়েছি। দ্রুততম সময়ে আমরা তাকে অ্যারেস্ট করেছি ” বলেন মি. মজুমদার।

এদিকে,মি. পিন্টুকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং মুসল্লিরা থানার সামনে জড়ো হয়ে তাকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার দাবি করতে থাকে। কিন্তু পুলিশ তাকে তাদের হাতে তুলে দিতে রাজী হয় নি।

মি. মজুমদার বলেন, “ কিন্তু স্থানীয় কিছু লোকজন চাচ্ছিলো তাদের হাতে দিয়ে তারা নিজেরা পানিশমেন্ট দিবে এ ধরনের দাবি জানাচ্ছিল। এটা তো আমাদের প্রচলিত আইন পরিপন্থী। আমি তাদের হাতে তুলে দিতে পারি না”।

অভিযুক্ত ওই যুবককে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছে বলে জানান মি. মজুমদার।

“ হাজী কামরুল ইসলাম নামের একজন বাদী হয়ে মামলা করেছে। আমরা যথারীতি তাকে (পিন্টু) অ্যারেস্ট করে আদালতে সোপর্দ করেছি। আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে ” বলেন মি. মজুমদার।

এই বিষয়ে মি. পিন্টুর স্বজনদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও কেউ রিসিভ করেননি।

বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।

সেনাবাহিনীর গাড়িতে কারা ছিলেন?

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, এ সময় থানা কম্পাউন্ডের অভ্যন্তরেই একটি সেনাবাহিনীর গাড়ি ছিল। সে গাড়িটি বের হয়ে যাওয়ার সময় ওই গাড়িতে অভিযুক্ত যুবক পিন্টুকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এই খবরে থানার বাইরে থাকা শতাধিক মানুষ ওই গাড়িটিকে ঘিরে ধরে। সেনাবাহিনীর জিপ গাড়িটির পেছনে একজন সিভিল পোশাক পরিহিত ব্যক্তিকে দেখা যায়।

উত্তেজিত মানুষ গাড়িটি ঘিরে ধরলে এক পর্যায়ে পেছন থেকে একজন সেনা সদস্যকে বের হয়ে তাদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়।

কিন্তু ওই সেনা সদস্য তাদের থামাতে না পারায় এক পর্যায়ে জিপ গাড়িটিকে পেছন দিকে চলে যেতে দেখা যায় ভিডিওতে।

এ সময় জিপ গাড়ির পেছনে বসা সাদা পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তিকে মারতে দেখা যায় ভিডিওতে।

একইসাথে জিপ গাড়িটি যখন পিছিয়ে যাচ্ছিল তখন ওই সেনা সদস্যকে আবার দৌড়ে থানার ভেতর যেতে দেখা যায়।

তবে, থানার ভেতরে কোন ভাঙচুর করা হয় নি বলে দাবি করেন মি. মজুমদার।

ঘটনার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা থানায় এসেছিল কিনা এ বিষয়ে কথা বলতে চান নি মি. মজুমদার। একইসাথে সেনা সদস্য আহতের বিষয়টি জানেন না বলে জানান মি. মজুমদার।

স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানান, “সেনাবাহিনীর জিপ গাড়িটিতে একজন সেনা কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরা ছিলেন”।

“থানা থেকে বের হওয়ার সময় সিভিল পোশাকে গাড়িতে অভিযুক্ত থাকার গুজব ছড়িয়ে পড়লে গাড়িটিতে হামলা করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি গাড়িতে ছিল না। সে ডিবি হেফাজতে ছিল। ওই গাড়িতে ছিল এক আর্মি কর্মকর্তার স্ত্রী, ছেলে এবং স্ত্রীর ভাই”।

এদিকে সেনা পোশাক পরা আহত একজনকে সোমবারই পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুচিতা দেব বিবিসি বাংলাকে জানান, “আহত একজন কালকেও আসছিল, আজকেও আসছে। আজকে আর্মির পোশাক পরিহিত একজন এক্সরে করাতে এসেছেন। এটেন্ডেন্ট জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি কালকে রাতেও আসছিল”।

বাংলাদেশে খুলনায় গত মাসের শুরুর দিকে এমন আরেকটি ঘটনায় পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরেই উৎসব মণ্ডল নামে এক যুবককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছিল।

এতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে পরে সেনাবাহিনী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল চিকিৎসাধীন রয়েছে আহত ওই যুবক।

আরো পড়ুন

বিবিসি বাংলার আরো খবর

2024-10-01T13:59:28Z dg43tfdfdgfd