KRISHNA SAYAR PARK : সিভিয়ার হিটওয়েভ তো কী, বর্ধমানে চলছে বৃক্ষনিধন যজ্ঞ

রূপক মজুমদার, বর্ধমানশহরের ফুসফুস কৃষ্ণসায়র পার্ক বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে। সেই পার্ক থেকে দিনের আলোয় বিশাল একটি শিরীষ গাছ কেটে ফেলা হলো যা জানতেই পারলেন না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অথচ ওই পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন ১২ জন নিরাপত্তারক্ষী। রয়েছেন এক জন কেয়ারটেকার। তা সত্ত্বেও কাটা পড়ল ওই গাছ। হই চই শুরু হলে নড়েচড়ে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার। খবর যায় বন দপ্তরে। কেটে রাখা গাছের কান্ড বন দপ্তর বাজেয়াপ্ত করেছে বলে জানিয়েছেন ডিএফও নিশা গোস্বামী।

তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে বর্ধমান। তাপমাত্রার পারদ চড়েছে ৪৪ ডিগ্রি পর্যন্ত। সিভিয়ার হিটওয়েভের মুখে পড়েছিল শহর। কিন্তু, তার পরেও এক শ্রেণির মানুষের যে হুঁশ ফেরেনি কৃষ্ণসায়র পার্কে গাছ কাটার ঘটনা তারই প্রমাণ দিল। বুধবার সকালে মে দিবসের দিনে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটিকে মাটিতে শুইয়ে দিল পাঁচেক লোক। গাছ কাটার খবর সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ফোন করে জানান স্থানীয়রা। ছবিও তুলে রাখেন তাঁরা। গাছ কাটার পিছনে ৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

কৃষ্ণসায়র পার্ক দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কর্মী বাপ্পা চক্রবর্তী। অভিযোগ, তাঁর নেতৃত্বেই ওই গাছ কাটা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাপ্পা বলেন, ‘গাছটি শুকিয়ে ডাল ভেঙে পড়ছিল। সেই জন্যেই আমরা ওটা কেটেছি। অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। কোনও টাকা-পয়সার লেনদেন হয়নি। এটা কেউ বলে থাকলে মিথ্যা কথা বলেছেন।’

পার্কের কেয়ারটেকারকে জানিয়ে গাছ কাটা হয়েছে বলে দাবি করেন বাপ্পা। তাঁর দাবি প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের স্থায়ী কর্মী ও নিজেকে কৃষ্ণসায়র পার্কে কেয়ারটেকার বলে দাবি করা গোপালচন্দ্র দে বলেন, ‘গাছ কাটার আগে আমাকে কেউ কিছু বলেনি। কয়েকদিন আগে গাছের ডাল পড়ে একটা সমস্যা হয়েছিল, সেটা বলেছিল।’

কৃষ্ণসায়র পার্কের নজরদারিতে থাকা ১২ জন নিরাপত্তারক্ষী তৃণমূল প্রভাবিত বর্ধমান ইউনির্ভাসিটি কর্মচারী সমিতির সদস্য। কমিটির সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বিষষয়ে জানানো হলে বলেন, ‘আমি শুনেছিলাম গাছের শুকনো কিছু ডাল কাটা হয়েছে। পরে এলাকায় গিয়ে দেখেছি, গোটা গাছটাই কেটে ফেলা হয়েছে। এটা অন্যায় হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদেরও দাবি, অনুমতি ছাড়া কী ভাবে এই গাছ কাটা হলো তা তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’

অর্থনীতির অধ্যাপক ভাস্কর গোস্বামী বলেন, ‘কেউ জানে না আর এ ভাবে গাছ কেটে ফেলা হলো, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আন্ডার দ্য টেবিল অনেক গল্প আছে। আমরাও এটা নিয়ে উপাচার্যর কাছে জানতে চাইব।’

গোলাপবাগে বাড়ি পরিবেশপ্রেমী শান্তনু সাহার। তিনি বলেন, ‘গোটা জেলা অসহনীয় তাপে পুড়ছে। গাছের জন্য আমাদের এখানে কিছুটা স্বস্তি মেলে। কিন্তু এই এলাকাও গাছ দুস্যদের হাতে পড়েছে। আমি নিজে ছবি তুলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বন দপ্তরের কাছে মেলে ছবি সমেত অভিযোগ জানিয়েছি। ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আদালতে যাব। এভাবে বন ধংস করা যাবে না।’

জেলার বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, ‘খবর পেয়ে বন দপ্তরের কর্মীদের পাঠিয়েছিলাম। গাছ কাটার কোনও অনুমতি ছিল না। কাটা গাছের কান্ডগুলো আমরা বাজেয়াপ্ত করেছি। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, উপাচার্যের দাবি, তাঁরা জানতেন না। রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের একেবারে অজানা ছিল। এটা চরম অপরাধ। উপাচার্যর নির্দেশে বন দপ্তর ও বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। শুকনো বা সুস্থ, গাছ যেমনই হোক, বিনা অনুমতিতে কেন কাটা হবে?’ সূত্রের খবর, কৃষ্ণসায়র পার্ক পরিচালন কমিটির সম্পাদক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অফিসার সৌগত চক্রবর্তীকে গাছ কাটার সঙ্গে জড়িতদের নাম লিখিত ভাবে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন উপাচার্য গৌতম চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘কড়া পদক্ষেপ করব আমরা। অবশ্যই এটা খতিয়ে দেখা হবে।’

এই ধরনের আরও খবর জানতে এই সময়ে আসুন। লেটেস্ট নিউজ, শহরের তাজা খবর, দেশের খবর, ব্যবসার খবর, খেলার আপডেট, দৈনিক রাশিফল এবং লাইফস্টাইলের টিপস জানুন। আর ভিডিয়োর জন্য রয়েছে TimesXP

2024-05-03T13:07:24Z dg43tfdfdgfd