CALCUTTA HIGH COURT : মায়ের টাকা মেয়ের কাছ থেকে কাড়তে হঠাৎ হাজির বাবা

অমিত চক্রবর্তীমেয়েই মায়ের একমাত্র নমিনি, তাঁকেই মায়ের অফিসের যাবতীয় পাওনা টাকা দিতে হবে— সাফ জানিয়ে দিলো কলকাতা হাইকোর্ট। জটিলতার কারণ? মেয়ের বাবা। আদালত পর্যন্ত বিষয়টা গড়ানোর কারণ? মেয়ের বাবা।

মেয়ের যখন পাঁচ বছর, তখন বাবা অন্যত্র চলে যান স্ত্রী ও কন্যাকে ছেড়ে। মেয়েকে বড় করে তোলেন মা একা। তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। এতগুলো বছর, ২০০৯ থেকে ২০২৩, ১৪ বছর বাবার কোনও পাত্তা ছিল না। কিন্তু মা, বর্ণালী দে গত বছর ২১ মে মারা যাওয়ার পর বাবা হঠাৎ হাজির! অফিসে স্ত্রীর যা আর্থিক পাওনাগণ্ডা, তিনি স্বামী হিসেবে সে সব দাবি করেন।

বর্ণালী কিন্তু ২০১৯ সালেই মেয়ের নামে ১০০ শতাংশ নমিনি করেছিলেন। তা সত্ত্বেও মায়ের নমিনি হিসেবে তাঁকে টাকাপয়সা দিতে মায়ের অফিস অনর্থক টালবাহানা করছে, এই অভিযোগ জানিয়ে ওই তরুণী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। মায়ের কর্মস্থল, কেন্দ্রীয় সরকারের জলশক্তি মন্ত্রক আদালতে হলফনামা দিয়ে জানায়, বর্ণালীর ফাইলে মেয়েকে ১০০ শতাংশ নমিনি করার কাগজ খুঁজে পাওয়া গেলেও সেই আবেদনটি সার্ভিস বুকে লেখা হয়নি।

হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বক্তব্য, আদালত মনে করে অফিসে জমা দেওয়া মায়ের সর্বশেষ নথি অনুযায়ী, একমাত্র নমিনি তাঁর মেয়েই এবং মা-হারা মেয়েকে আদালত তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না। আদালতের নির্দেশ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে নথি সংশোধন করে মামলাকারীকে তাঁর মৃত মায়ের সব রকম প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধে আগামী দু’মাসের মধ্যে মিটিয়ে দেবেন, অন্যথায় ৮ শতাংশ সুদ যোগ হবে প্রাপ্য অর্থের সঙ্গে।

কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতায়’ বিরক্ত হাইকোর্ট। বিচারপতি মান্থার সংযোজন, অফিসের ফাইলে ১০০ শতাংশ নমিনি পরিবর্তনের রেকর্ড রয়েছে, অথচ সংশ্লিষ্ট কর্মীর সার্ভিস বুকে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি— এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

বেহালার পর্ণশ্রীর বর্ণালী দে ও তাঁর মেয়েকে ছেড়ে বর্ণালীর স্বামী ২০০৯-তে অন্যত্র চলে যান। মেয়েকে বড় করেন বর্ণালী একাই। কর্মরত অবস্থায় তিনি আক্রান্ত হন ব্লাড ক্যান্সারে। নিজের চিকিৎসা এবং মেয়ের পড়াশোনা সামলাতে গিয়ে অসহায় অবস্থা হয় ওই মহিলার। গত বছর ২১ মে বর্ণালী মারা যান। মায়ের মৃত্যুতে অথৈ জলে পড়েন বর্ণালীর মেয়ে, ১৯ বছরের কলেজছাত্রী।

মায়ের মৃত্যুর পর প্রাপ্য টাকা ও মাসিক পেনশনের জন্য জলশক্তি মন্ত্রকে আবেদন করেন তিনি। আর তখনই মায়ের অফিস সূত্রে ওই তরুণী জানতে পারেন, তাঁর বাবা এতগুলো বছর পর এসে হাজির এবং বর্ণালীর স্বামী হিসেবে তিনি অফিসের সেই সব পাওনাগণ্ডার দাবি করছেন!

কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক জানায়, বর্ণালী দে তাঁর মেয়ের জন্মের আগে অফিসে তাঁর যাবতীয় পাওনার ক্ষেত্রে নিজের মা ও স্বামীকে ৫০:৫০ নমিনি করেছিলেন। তবে ২০১৯ সালে বর্ণালী সেই নথির পরিবর্তন করে মেয়েকেই ১০০ শতাংশ নমিনি করেছিলেন। যা তাঁর সার্ভিস বুকে রেকর্ড করা হয়নি। এমনকী অভিযোগ, বর্ণালীর অফিস থেকে তাঁর মেয়েকে জানানো হয় যে, মেয়েকে যাতে তাঁর মায়ের প্রাপ্য কিছুই না-দেওয়া হয়, সে জন্যও ওই ব্যক্তি চেষ্টা করছেন। হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই তরুণী। আদালতে মেয়ের আবেদনের বিরোধিতা করে তাঁর বাবা মামলায় যুক্ত হন।

বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে তরুণীর আইনজীবী আশিস চৌধুরী জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের এক জন কর্মচারী নিজের নমিনির পরিবর্তন করলেও কর্তৃপক্ষ সেটা সার্ভিস বুকে অন্তর্ভুক্ত করলেন না, অসহায় মেয়েকে তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর ন্যায্য পাওনা থকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র চলছে। হাইকোর্ট দাঁড়াল মেয়ের পাশেই।

এই ধরনের আরও খবর জানতে এই সময়ে আসুন। লেটেস্ট নিউজ, শহরের তাজা খবর, দেশের খবর, ব্যবসার খবর, খেলার আপডেট, দৈনিক রাশিফল এবং লাইফস্টাইলের টিপস জানুন। আর ভিডিয়োর জন্য রয়েছে TimesXP

2024-04-29T09:51:20Z dg43tfdfdgfd